Header Ads

Pailse - শিশুর পাইলস সমস্যা

পাইলস শিশুদেরও হয়। তবে প্রকৃত পাইলস শিশুদের কম হয়। প্রথমেই আমরা আলোচনা করব পাইলস রোগটি আসলে কী? কারণ এটি নিয়ে বিস্তর বিভ্রান্তি রয়েছে। ঢাকা শহরের আবাসিক এবং অফিস এলাকায় খুব কমসংখ্যক লাইটপোস্ট আছে, যেখানে হাতুড়ে ডাক্তারদের পাইলসের সাইনবোর্ড নেই। মলদ্বারের যেকোনো সমস্যাকে সবাই পাইলস হয়েছে বলে ধরে নেন। পাইলস বলতে বোঝায়, মলদ্বারে ফুলে ওঠা মাংসপিণ্ড বা গ্যাজ। অসংখ্য শিরা মিউকাস ঝিল্লির তলায় ফুলে ওঠার কারণে মাংসপিণ্ড ফুলে ওঠে এবং কখনো কখনো রক্ত যায়। পাইলসের চিকিৎসা বিজ্ঞানের নাম হলো হেমোরয়েড। হেমোরয়েড অর্থ হলো টয়লেটে রক্ত যাওয়া। অভ্যন্তরীণ পাইলসে মাংসপিণ্ড না থাকলেও প্রচুর রক্ত যেতে পারে। আবার অনেক বড় গ্যাজ আছে কিন্তু রক্ত নাও যেতে পারে। এ রক্ত যাওয়ার আবার তারতম্য আছে। তবে সাধারণত কয়েক দিন থেকে কয়েক মাস পরপর রক্ত যায়। শিশুদের পাইলস হলে বড়দের চেয়ে বেশি রক্ত যায়। গত নয় বছরে মলদ্বারের সমস্যায় আক্রান্ত ২৯ হাজার ৬৩৫ জন রোগীর ভেতর ছয়টি শিশুর পাইলস দেখেছি। এক শিশু পাঁচ মাস বয়স থেকে, অন্য আরেকিট শিশু তিন বছর বয়স থেকে রক্ত যেতে যেতে মূর্ছা যেত। এর পর রক্ত দিলে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠত। এ দু’জনকে বিনা অপারেশনে রিংলাইগেশন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করায় সম্পূর্ণ ভালো হয়েছে। তবে অভিভাবকরা শিশুদের যে পাইলসের সমস্যা অর্থাৎ টয়লেটে রক্ত গেলে চিকিৎসকের কাছে আসেন তাদের বেশিরভাগই পাইলস নয়। শিশুদের টয়লেটে রক্ত যাওয়ার প্রধান কারণ রেকটাল পলিপ। এটি একধরনের আঙুর ফলের মতো টিউমার, যা ক্যান্সার নয়। এ টিউমার থেকে প্রচুর রক্ত যায়। এগুলো এক বা একাধিক হতে পারে এবং এরূপ শত শত পলিপ থাকতে পারে­ যা থেকে সাধারণত রক্ত ও মিউকাস বা আম যায়। রোগীর অভিভাবকরা মনে করেন, এটি রক্ত আমাশয় এবং ওষুধ দিয়ে ভালো করা যাবে। রেকটাল পলিপ রোগের চিকিৎসা হচ্ছে এটিকে কেটে ফেলে দেয়া। রোগীকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে এটি করতে হয়। অভিভাবকদের ভয়, ছোট্ট শিশুকে অজ্ঞান করলে তার ক্ষতি হবে। কিন্তু বহু দিন রক্ত যাওয়ায় শিশুটি যে রক্তশূন্যতায় ভুগছে সেদিকে তাদের লক্ষ্য থাকে না। সবচেয়ে অসুবিধা হচ্ছে, দাদী-নানীরা অপারেশনের কথা শুনলেই একেবারে বেঁকে বসেন। তাদের ধারণা, এতটুকুন শিশুকে কখনো অজ্ঞান করা উচিত নয়। তারপর অনন্যোপায় হয়ে আধুনিক তরুণ বাবা-মা বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে ধরনা দেন চিকিৎসায় এ রোগ ভালো করার জন্য। কিন্তু সেটি কোনো ডাক্তারের পক্ষেই সম্ভব নয়।
রেকটাল পলিপ অপারেশনের জন্য একটি শিশুকে কয়েক ঘণ্টা হাসপাতালে রাখলেই চলে। রোগীর পেট খালি করার জন্য আগের দিন কিছু ওষুধ দেয়া হয় যাতে পায়খানা পরিষ্কার হয়। খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে অপারেশন করাই ভালো। এ জন্য রোগীকে ঘুম পাড়ানোর ইনজেকশন দিতে হয়। একটি বিশেষ ধরনের যন্ত্রের সাহায্যে টিউমারটি (পলিপ) কেটে আনা হয়। যেহেতু এ অপারেশনে মলদ্বারে কোনো কাটাছেঁড়া করা হয় না, তাই অপারেশনের পর ব্যথা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। অপারেশনের দু-তিন ঘণ্টা পর রোগী স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করতে পারে এবং সরাসরি বাসায় চলে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বহির্বিভাগের রোগী হিসেবে পরক্ষণেই চলে যেতে পারে।

শিশুদের জন্য একটি সমস্যা হয়। এতে পায়খানা শক্ত হলে মলদ্বার ফেটে যায় এবং ব্যথা হয়। কিছুটা রক্তও যেতে পারে। কিছু দিন পর মলদ্বারে একটি গ্যাজ দেখা যায়। শিশু টয়লেটে যেতে ভয় পায় ব্যথার কারণে। এ রোগটির নাম এনাল ফিশার। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক মল নরম করার জন্য ওষুধ দেন। পানি, সবজি, সালাদ খেলে উপকার পাওয়া যায়। পায়ুপথে মলম লাগানো যেতে পারে। চুলকানি হলে কৃমির ওষুধও দিতে হবে। জন্মের পর পরই যেকোনো সময় এ রোগ হতে পারে। সর্বকনিষ্ঠ এক মাস দশ দিনের শিশুকে দেখেছি এ রোগে আক্রান্ত হতে। উপরোক্ত পদ্ধতি ও ওষুধ প্রয়োগেও ভালো না হলে অপারেশন করতে হয়।

মলদ্বারে শিশুদেরও হয় সেরকম আরেকটি রোগ হচ্ছে ফিস্টুলা বা ভগন্দর। এতে মলদ্বারের পাশে একটি মুখ থেকে পুঁজ ও রক্ত যায় এবং ব্যথা হয়। ১৭ মাসের একটি শিশুর এ রোগ দেখেছি। এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা অপারেশন, তবে এটি শিশুদের খুব কম হয়।

মলদ্বারের প্রতিটি রোগের বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা রয়েছে এবং এর প্রতিটিতেই সঠিক চিকিৎসায় সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা যায়। বড়দের যে রোগটি সবচেয়ে বেশি হয় সেটি হলো পাইলস। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন ৮০-৯০ শতাংশ পাইলস রোগী বিনা অপারেশনে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেন। এ পদ্ধতির নাম হচ্ছে ‘রিং লাইগেশন’ পদ্ধতি। কোনোরূপ অবশ, অজ্ঞান না করেই চেম্বারেই এর চিকিৎসা করা হয়। যে ক্ষেত্রে অপারেশন দরকার সে ক্ষেত্রেও দু-তিন দিন মাত্র হাসপাতালে থাকতে হয়। অপারেশনের পর পাইলস আবার হয়­ এ ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক। তবে ২ শতাংশ ক্ষেত্রে আবার হতে পারে। পেটে কৃমি থাকলে তার অবশ্যই চিকিৎসা করা উচিত। তবে কৃমির বাসা থেকে এ রোগের উৎপত্তি­ এ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত।

উৎসঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত, ০৯ ডিসেম্বর ২০০৭
লেখকঃ অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক
বৃহদান্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
Powered by Blogger.