Header Ads

Growth of the prostate gland - প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি

প্রোস্টেট হচ্ছে একটা ছোট গ্রন্থি যা পুরুষদের থাকে। এটি অবস্থিত মূত্রথলির ঠিক নিচে। প্রোস্টেট ঘিরে রাখে প্রস্রাবের পথ বা মূত্রনালিকে। সাধারণত এটির আকৃতি প্রায় একটা আখরোটের মতো। যদিও সব পুরুষেরই প্রোস্টেট থাকে, তবে মধ্য বয়সে এটা সাধারণত বড় হতে শুরু করে। বয়স যত বাড়ে, প্রোস্টেট তত বড় হতে থাকে এবং এটা প্রস্রাবের পথকে ঠেলা দিতে থাকে। প্রোস্টেট গ্রন্থি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হওয়াকে বলে ‘হাইপারট্রফিক’ এবং এই অবস্থাকে বলে বিনাইল প্রোস্টেটিক হাইপারট্রফি সংক্ষেপে বিপিএইচ। প্রোস্টেট বড় হওয়া মানে প্রোস্টেট ক্যান্সার নয়।

উপসর্গঃ

    প্রস্রাবের ধারা দুর্বল হওয়া
    প্রস্রাব করার সময় ইতস্তত করা
    প্রস্রাবের ধারা বন্ধ হওয়া এবং আবার শুরু হওয়া
    প্রস্রাব করার পর প্রস্রাবের থলিতে আরো প্রস্রাব থেকে গেছে এমন অনুভূতি হওয়া
    দিনের বেলা বারবার প্রস্রাব হওয়া
    ঘন ঘন প্রস্রাবের পথে ইনফেকশন হওয়া
    প্রস্রাবের তাড়া অনুভব করা, অনেক সময় প্রস্রাব হয়ে যাওয়া
    প্রস্রাব করার জন্য রাতে বার বার ওঠা

পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়েছে কি না তা দেখার জন্য মলদ্বারে আঙুল ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এতে প্রোস্টে গ্রন্থির আকার ও কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি না তা বোঝা যায়। ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে প্রস্রাবের পরীক্ষা ও পিএসএ পরীক্ষা। পিএসএ হলো একটি উপাদান যা প্রোস্টেট কতৃêক উৎপাদিত হয়। প্রোস্টেটের সমস্যা হলে এটির পরিমাণ বেড়ে যায়। কিছু অন্য পরীক্ষা, যেমন­ ইউরোফ্লোমেট্রি এবং পিভিআর বেশ সহায়ক। ইউরোফ্লোমেট্রির মাধ্যমে প্রস্রাবের গতি ও প্রস্রাব প্রবাহের পরিমাণ পরিমাপ করা হয়। প্রস্রাব করার পর মূত্রথলিতে প্রস্রাব রয়েছে কি না তা নির্ণয় করতে পিভিআর করা হয়। এটি করা হয় সাধারণত আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে। কখনো কখনো প্রস্রাবের সমস্যার কারণ খুঁজতে প্রেসার-ফ্লো দেখার প্রয়োজন হয়। প্রোস্টেট গ্রন্থির সঠিক মাপ জানতে এবং কোনো ক্যান্সার আছে কি না তা পরীক্ষা করতে প্রোস্টেটের আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা খুব সহায়ক।

চিকিৎসাঃ

    শল্য চিকিৎসা
    টিইউআরপি
    লেসার সার্জারি
    ওপেন প্রোস্টেটেকটমি
    টিইউএনএ
    মেডিক্যাল চিকিৎসা
    ফিনাস্টেরাইড
    আলফা ব্লকার ওষুধ

শল্য চিকিৎসাঃ টিইউআরপিঃ প্রোস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধির জন্য ট্রান্সইউরেথ্রাল রিসেকশন অব দ্য প্রোস্টেট বা টিইউআরপি হলো সাধারণ শল্য চিকিৎসা। এটাকে সচরাচর ‘রোটো-রুটার’ সার্জারি নামে ডাকা হয়।
এ ক্ষেত্রে মূত্রপথ দিয়ে একটা যন্ত্র ঢুকিয়ে প্রোস্টেটের সেই পয়েন্ট পর্যন্ত যাওয়া হয়, যেখানে প্রস্রাবের গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। তারপর অতিরিক্ত টিসু কেটে ফেলা হয়। শরীরের বাইরে কোনো কাটাছেঁড়া করা হয় না। হাসপাতালে সাধারণত অল্প কয়েকদিন থাকার প্রয়োজন হয়।

লেসার সার্জারিঃ প্রোস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধির চিকিৎসায় লেসার সার্জারি অনেকটা টিইউআরপি’র মতোই। এ ক্ষেত্রেও প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে যন্ত্র ঢোকানো হয় এবং শরীরের বাইরে কোথাও কাটা হয় না। রক্তপাত খুব কম হয় এবং হাসপাতালে খুব কম সময় থাকতে হয়।

ওপেন প্রোস্টেটেকটমিঃ প্রোস্টেট গ্রন্থি খুব বেশি বড় হলে ওপেন প্রোস্টেটেকটমির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এ ক্ষেত্রে তলপেট কেটে অপারেশন করা হয় এবং প্রোস্টেট গ্রন্থির অংশ বের করে আনা হয়। এই চিকিৎসায় সাধারণত প্রস্রাবের সমস্যা দ্রুত ও দীর্ঘস্থায়ী সুফল পাওয়া যায়।

মেডিক্যাল চিকিৎসাঃ ফিনাস্টেরাইডঃ এটি খাওয়ার একটি ওষুধ, যা প্রোস্টেট গ্রন্থিকে সঙ্কুচিত করে এবং এর ফলে প্রস্রাবের উপসর্গের উন্নতি ঘটে। কখনো কখনো এটি কয়েক মাস গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। ওষুধ বন্ধ করলে আবার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে লিঙ্গের উত্থানে সমস্যা দেখা দেয় এবং যৌনস্পৃহা কমে যায়।

অন্য ওষুধঃ আলফা ব্লকার ওষুধগুলো প্রোস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধির চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা হয়। এসব ওষুধ প্রোস্টেটের পেশিগুলোকে শিথিল করে এবং এর ফলে প্রস্রাবের উপসর্গগুলো কমে যায়। অবস্থা ভালো হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। ওষুধের মাত্রা পুনর্নির্ধারণের প্রয়োজন হতে পারে। আলফা ব্লকার ওষুধগুলোর উপসর্গের মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, ক্লান্তি অথবা রক্তচাপ কমে যাওয়া। এসব ওষুধ যত দিন চালিয়ে যাবেন, তত দিন প্রস্রাবের উপসর্গগুলো কম থাকে। চিকিৎসা চলাকালে নিয়মিত চিকিৎসককে দিয়ে পরীক্ষা করাবেন।

জটিলতাঃ প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি বা বিপিএইচ চিকিৎসা না করালে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় থাকলে তা মূত্রথলি থেকে প্রস্রাব বের হতে বাধা দেয়। এর ফলে মূত্রথলিতে বাড়তি চাপ পড়ে। মূত্রথলিতে এ চাপ প্রস্রাবকে বৃক্কনালির মধ্য দিয়ে পেছন দিকে ও কিডনিতে ঠেলে দেয়। এর ফলে বৃক্কনালি ও কিডনি বড় হয়ে যায় এবং একসময় কিডনি তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। মূত্রথলির দেয়াল দুর্বল হয়ে যায়। মূত্রথলি দুর্বল হয়ে গেলে প্রস্রাব করার পরও কিছু প্রস্রাব মূত্রথলিতে থেকে যায়। মূত্রথলিতে প্রস্রাব থেকে গেলে বারবার মূত্রপথে ইনফেকশন বা সংক্রমণ হয়। এই সংক্রমণ কিডনিতে ছড়িয়ে যেতে পারে।

দৈনিক নয়াদিগন্ত, ৩০শে ডিসেম্বর ২০০৭
লেখকঃ ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
Powered by Blogger.