Header Ads

Urethritis - মূত্রনালীর প্রদাহ বা ইউরেথ্রাইটিস

 
মূত্রনালীতে সংক্রমণ হলে ও জ্বালা করলে তাকে মূত্রনালীর প্রদাহ বা ইউরেথ্রাইটিস বলে। মূত্রনালী হচ্ছে একটি নল যা মূত্রথলি থেকে প্রস্রাব বহন করে। পুরুষের মূত্রনালী থাকে পুরুষাঙ্গের মধ্যে। এটা বীর্য ও শুক্রাণুকেও পুরুষাঙ্গের বাইরে বের করে দেয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে মূত্রনালী শুধু মূত্রথলি থেকে প্রস্রাব বহন করে বের করে দেয়।
অসংখ্য পুরুষ মূত্রনালীর প্রদাহ বা ইউরেথ্রাইটিসে ভোগেন। এদের অনেকের কোনো উপসর্গ থাকে না। যদি আপনার নিচের কোনো উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। যদি ইউরেথ্রাইটিসের চিকিৎসা না করান তাহলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে।

ইউরেথ্রাইটিসের উপসর্গ
প্রস্রাবে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া করা।
চুলকানি।
লিঙ্গ দিয়ে পুঁজ বা মিউকাস বেরিয়ে আসা (আপনার আন্ডার ওয়ারে দাগ দেখা দিতে পারে)

লিঙ্গের মাথার ছিদ্র লাল হতে পারে।

আগেই বলা হয়েছে ইউরেথ্রাইটিস হলো মূত্রনালীর প্রদাহ এবং এটা সংক্রমণ বা অসংক্রমণজনিত কারণে হতে পারে। তবে প্রাথমিকভাবে এটা একটা যৌনঘটিত অর্জিত রোগ।

যদি আপনার নিচের যে কোনো একটি বিষয় উপস্থিত থাকে তাহলে ইউরেথ্রাইটিস নির্ণয় করা যেতে পারে।

মূত্রনালীর মাথায় অর্থাৎ লিঙ্গমুণ্ডুর ছিদ্রে পুঁজ বা পুঁজজাতীয় নিঃসরণ।

মূত্রনালীর নিঃসরণ পরীক্ষা করলে যদি উচ্চমাত্রার পলিমরফো নিউক্লিয়ার কোষ পাওয়া যায়। (৬৫ পিএমএন/হাই পাওয়ার ফিল্ড)।

প্রস্রাবের ক্ষেত্রে > ১০ পিএমএল/হাই পাওয়ার ফিল্ড।

পুরুষের ইউরেথ্রাইটিসের শ্রেণী বিভাগ
গনোকক্কাল ইউরেথ্রাইটিস­ এটার কারণ হলো নাইসেরিয়া গনোরিয়া নামক জীবাণু।
নন-গনোকক্কাল ইউরেথ্রাইটিস­ এটার কারণ নাইসেরিয়া গনোরিয়া ব্যতীত অন্য জীবাণু।

রিকারেন্ট ইউরেথ্রাইটিস­ এটা হলো বারবার মূত্রনালীর প্রদাহে আক্রান্ত হওয়া। যদিও বিভিন্ন কারণে এটা হতে পারে। তবে টেট্রাসাইক্লিন প্রতিরোধক ইউ.

ইউরিয়ালাইটিকাম একটি কারণ।

নন-গনোকক্কাল ইউরেথ্রাইটিসের কারণ
ক্লামাইডিয়া ট্রাকোমাটিস ৪০%
? ইউরিয়াপ্লাজমা ইউরিয়ালাইটিকাম ১০-২০%
মাইকোপ্লাজমা জেনিটালিয়াম ১০-২০%
ট্রাইকোমানাস ভ্যাসাইনালিস ১-১৭%
বিরল ক্ষেত্রে­ নাইসেরিয়া মেনিন জাইটিস, এইচএসভি, ই কলাই সংক্রমণ, আঘাত, বাইরের কোনো বস্তু, প্রস্রাবের পথের সংক্রমণ, কিডনির প্রদাহ, জীবাণু সংক্রমণ, বাতরোগ, রেইটারস সিনড্রোম।
কারণ পাওয়া যায় না ২০-৩০%
রোগের ব্যাপকতা

গনোকক্কাল ইউরোথ্রাইটিসের চেয়ে নন-গনোকক্কাল ইউরেথ্রাইটিস বেশি পরিলক্ষিত হয়। ১৬-২৪ বছর বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে ২-৬% রোগের কারণ ক্লামাইডিয়া। ২০-২৪ বছর বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে এ রোগের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো গনোরিয়া।
যেসব লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ পায়

উপসর্গবিহীন থাকতে পারে (১০% রোগীর গনোরিয়া এবং ৫০% রোগীর ক্লামাইডিয়া সংক্রমণ থাকে)।

মূত্রপথে নিঃসরণ-পুঁজ অথবা পুঁজজাতীয় নিঃসরণ; রক্ত যেতে পারে।
প্রস্রাব করতে কষ্ট হয়­ প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করে।
মূত্রনালীতে চুলকানি হয়।
অন্যান্য উপসর্গ যেমন ত্বকের ক্ষত
কনজাংটিভাইটিস অথবা বাতের ব্যথা থাকতে পারে।
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রোগী
যারা যৌনভাবে সক্রিয়
পুরুষ
যে সব পুরুষ অরক্ষিত যৌন সঙ্গম করে
সমকামী বা বহুগামী পুরুষ
৩৫-৪০ বছরের কম বয়সী পুরুষ
সম্প্রতি যৌনসঙ্গিনী বদল করা।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
ইউরেথ্রাল স্নেয়ার
এফপিইউ
ফ্যারিংস ও মলদ্বারের রস
প্রস্রাব পরীক্ষা
ব্যবস্থাপনা
নন-গনোকক্কাল ইউরেথ্রাইটিস
ডক্সিসাইক্লিন ১০০ মি. গ্রা. দৈনিক ২ বার-৭ দিন অথবা এজিথ্রোমাইসিন ১ গ্রাম মুখে একক মাত্রা হিসেবে অথবা ওফ্লোক্সাসিন ২০০ মি. গ্রা. দৈনিক ২ বার- ৭ দিন।
গনোকক্কাল ইউরেথ্রাইটিস-
সেফিক্সিম ৪০০ মি. গ্রা. মুখে একক মাত্রা হিসেবে অথবা সেফট্রায়াক্সন ২৫০ মি. গ্রা. মাংসপেশি পথে একক মাত্রা হিসেবে।
বিকল্প হিসেবে কুইনোলোন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
অভিজ্ঞতাপূর্ণ চিকিৎসা
এ ক্ষেত্রে ক্লামাইডিয়া ট্রাকোমোটিসের চিকিৎসা করা যেতে পারে, যেমন-
ডক্সিসাইক্লিন ১০০ মি.গ্রাম দৈনিক ২ বার-
৭ দিন অথবা এজিথ্রোমাইসিন ১ গ্রাম মুখে একক মাত্রা হিসেবে।
রোগীর জন্য উপদেশ ও পরবর্তী চিকিৎসা
যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো খেতে হবে।
নিরাপদ যৌনসঙ্গম করতে হবে অর্থাৎ কনডম ব্যবহার করতে হবে।
ইনফেকশন সেরে না ওঠা পর্যন্ত যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে এবং যৌন সঙ্গিনীকেও পরীক্ষা করাতে হবে।
চিকিৎসা গ্রহণের দু’সপ্তাহ পর আবার চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে রোগের পর্যায় দেখার জন্য।
যদি প্রথমেই ডক্সিসাইক্লিন ব্যবহার করা হয় তাহলে টেট্রাসাইক্লিন প্রতিরোধক ইউ. ইউরিয়ালাইটিকাম-এর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে এবং বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে মেট্রোনিডাজল অথবা ইরাইথ্রোমাইসিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
যদি ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় কোনো ইনফেকশনের প্রমাণ পাওয়া না যায় তাহলে চিকিৎসা হিসেবে ৭ দিন যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে এবং যৌনসঙ্গিনীর চিকিৎসা করতে হবে।
যদি উপসর্গগুলো ৩ মাসের বেশি স্থায়ী থাকে তাহলে সম্ভাব্য জটিলতা যেমন প্রোস্টেটাইটিস এপিডিডাইমাইটিস হতে পারে। এসবের চিকিৎসা করতে হবে।
যদি বারবার নন-গনোকক্কাল ইউরোথ্রাইটিস হয় তাহলে ইরাইথ্রোমাইসিন অথবা মেট্রোনিডাজল সহকারে চিকিৎসা করতে হবে।
রোগের জটিলতা
এপিডিডাইমিসের প্রদাহ অথবা অণ্ডকোষের প্রদাহ
প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ
গনোরিয়ার ক্ষেত্রে কনজাংটিভাইটিস, ত্বকের ক্ষত
বাত ব্যথা
তলপেটে ব্যথা
রেইটার’স সিনড্রোম
এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি

——————————-
ডা. মিজানুর রহমান
Powered by Blogger.