Throat and ear pain, shortness of breath - গলা ও কানে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট
শীত আসি আসি করছে। সোনামণিদের সাবধানে রাখতে হবে এখন থেকেই, যেন অল্পতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে। কিছু রোগ আছে, যা শীতে শিশুদের আক্রমণ করে। আবার অনেক রোগ ভালোও হয়ে যায়। শীত এলেই দেখা যায়, শিশুদের ঠান্ডা-কাশি বেশি হয়। একটু ঠান্ডা লাগলেই অনেকের নাক দিয়ে পানি পড়ে, গলা ব্যথা করে, কানে ব্যথা হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, জ্বর হতে পারে; এমনকি ডায়রিয়াও হয়ে থাকে, যাকে বলে শীতকালীন ডায়রিয়া। চর্মরোগও দেখা দিতে পারে।
কাজেই শিশুদের শীতকালে একটু সাবধানে রাখা দরকার, যেন হঠাৎ করে ঠান্ডা লেগে না যায়। ছোটমণিরা কথা বলতে পারে না। রাতে হঠাৎ কান্না শুরু করে। ঘুম ভেঙে যায় মা-বাবার। কিছুতেই কান্না থামানো যাচ্ছে না। রাতেই ছুটে যেতে হয় হাসপাতালে বা ক্লিনিকে। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে কিছুই পান না। ওষুধ দিয়ে বিদায় করে দেন, অথবা অনেক সময় ভর্তি করে রাখেন। পরদিন দেখা যায়, কান্না বন্ধ; কিন্তু কান দিয়ে রক্ত বা পঁুজ পড়ছে। অর্থাৎ কানের ব্যথায় শিশুটি কাঁদছিল। তার হয়েছিল অ্যাকিউট অটাইটিস মিডিয়া। কান পরিষ্কার রাখতে হবে, অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
অনেক সময় কান-গলা ব্যথা, জ্বর, গলার লিম্পনোডে ব্যথাসহ ফুলে যেতে পারে। টনসিল লাল হতে পারে। দানা দানা পুঁজ থাকতে পারে। খেতে কষ্ট হতে পারে। এটা হলো টনসিলের সংক্রমণ-অ্যাকিউট টনসিলাইটিস। এ রকম হলে চিকিৎসকের পরামর্শে পেনিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথার ওষুধ প্যারাসিটামল খেতে হবে।
ঠান্ডায় শিশুদের নিউমোনিয়া হতে পারে। প্রথমত ঠান্ডায় সর্দি লাগলে অবহেলা না করে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ওষুধটা খাওয়াবেন। অবহেলা করলে শিশু আরও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে প্রতিবছর অনেক শিশু মারা যায়। শুধু অবহেলা ও ঠিকমতো চিকিৎসা না পাওয়ায় শ্বাসকষ্ট, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস হতে পারে, বুকের খাঁচা দেবে যেতে পারে। এ÷লো নিউমোনিয়ার লক্ষণ। দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তা না হলে ব্রংকিওলাইটিস, হুইজি ব্রংকাইটিস ইত্যাদি হতে পারে।
নাক দিয়ে পানি ঝরা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, পাকা কফ নাক দিয়ে বের হওয়া, হাঁচি ইত্যাদি হলে বুঝতে হবে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হয়েছে। অনেক সময় শিশুরা হাত দিয়ে বারবার নাক পরিষ্কার করে। ফলে নাকে দাগ পড়বে ও লাল হয়ে যাবে। এমনভাবে নাকে বারবার হাত দেবে, মনে হবে সালাম করছে-যাকে বলে অ্যালার্জিক স্যালিউট। রক্ত পরীক্ষায় ইওসিনোফিলস কাউন্ট বেশি হবে, তাই জিইর মাত্রা বেড়ে যাবে।
এ রকম হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিহিস্টামিন সিরাপ খাওয়াতে হবে, নাক বন্ধ থাকলে নাকের ড্রপ দেওয়া যেতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিকও লাগতে পারে। শীতের সময় বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দিতে পারে-খুসকি, পাঁচড়া, চুলকানি ইত্যাদি। তাই নিয়মিত শিশুর ত্বকের পরিচর্যা করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শিশুকে নিয়মিত গোসল করানো দরকার। গোসলের পর অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। চর্মরোগ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মলম ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে।
শীতকালে শিশুরা অনেক সময় ঘন ঘন প্রস্রাব করতে পারে। অনেক মা-বাবাই এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। বারবার কাপড় বদলানো, কাঁথা বা চাদর পাল্টানো তাঁদের জন্য একটা বাড়তি ঝামেলা মনে হয়। অনেকে এও মনে করেন, শিশুর ডায়াবেটিস হয়েছে। ছুটে আসেন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে। আসলে এটা তেমন কিছুই নয়। গরমের দিনে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায়; ফলে প্রস্রাব হয় কম। শীতকালে ঘাম কম হওয়ায় প্রস্রাব বেশি হয়ে থাকে। তবু প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা করলে তার রিপোর্ট স্বাভাবিক পাওয়া যায়। মা-বাবা চিন্তামুক্ত হতে পারেন। তাই ছোট থেকে শুরু করে বড় ধরনের শীতকালীন কোনো রোগ হওয়ার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার শিশুকে নিয়মিত হেলথ চেকআপ করান এবং প্রয়োজনীয় টিকাগুলো নিয়মিত দিন। নিউমোনিয়া ও ম্যানিনজাইটিসের টিকা দিতে ভুলবেন না।
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো, ২১ নভেম্বর ২০০৭
লেখকঃ ডা· মো· মুজিবুর রহমান মামুন
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট
কাজেই শিশুদের শীতকালে একটু সাবধানে রাখা দরকার, যেন হঠাৎ করে ঠান্ডা লেগে না যায়। ছোটমণিরা কথা বলতে পারে না। রাতে হঠাৎ কান্না শুরু করে। ঘুম ভেঙে যায় মা-বাবার। কিছুতেই কান্না থামানো যাচ্ছে না। রাতেই ছুটে যেতে হয় হাসপাতালে বা ক্লিনিকে। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে কিছুই পান না। ওষুধ দিয়ে বিদায় করে দেন, অথবা অনেক সময় ভর্তি করে রাখেন। পরদিন দেখা যায়, কান্না বন্ধ; কিন্তু কান দিয়ে রক্ত বা পঁুজ পড়ছে। অর্থাৎ কানের ব্যথায় শিশুটি কাঁদছিল। তার হয়েছিল অ্যাকিউট অটাইটিস মিডিয়া। কান পরিষ্কার রাখতে হবে, অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
অনেক সময় কান-গলা ব্যথা, জ্বর, গলার লিম্পনোডে ব্যথাসহ ফুলে যেতে পারে। টনসিল লাল হতে পারে। দানা দানা পুঁজ থাকতে পারে। খেতে কষ্ট হতে পারে। এটা হলো টনসিলের সংক্রমণ-অ্যাকিউট টনসিলাইটিস। এ রকম হলে চিকিৎসকের পরামর্শে পেনিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথার ওষুধ প্যারাসিটামল খেতে হবে।
ঠান্ডায় শিশুদের নিউমোনিয়া হতে পারে। প্রথমত ঠান্ডায় সর্দি লাগলে অবহেলা না করে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ওষুধটা খাওয়াবেন। অবহেলা করলে শিশু আরও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে প্রতিবছর অনেক শিশু মারা যায়। শুধু অবহেলা ও ঠিকমতো চিকিৎসা না পাওয়ায় শ্বাসকষ্ট, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস হতে পারে, বুকের খাঁচা দেবে যেতে পারে। এ÷লো নিউমোনিয়ার লক্ষণ। দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তা না হলে ব্রংকিওলাইটিস, হুইজি ব্রংকাইটিস ইত্যাদি হতে পারে।
নাক দিয়ে পানি ঝরা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, পাকা কফ নাক দিয়ে বের হওয়া, হাঁচি ইত্যাদি হলে বুঝতে হবে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হয়েছে। অনেক সময় শিশুরা হাত দিয়ে বারবার নাক পরিষ্কার করে। ফলে নাকে দাগ পড়বে ও লাল হয়ে যাবে। এমনভাবে নাকে বারবার হাত দেবে, মনে হবে সালাম করছে-যাকে বলে অ্যালার্জিক স্যালিউট। রক্ত পরীক্ষায় ইওসিনোফিলস কাউন্ট বেশি হবে, তাই জিইর মাত্রা বেড়ে যাবে।
এ রকম হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিহিস্টামিন সিরাপ খাওয়াতে হবে, নাক বন্ধ থাকলে নাকের ড্রপ দেওয়া যেতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিকও লাগতে পারে। শীতের সময় বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দিতে পারে-খুসকি, পাঁচড়া, চুলকানি ইত্যাদি। তাই নিয়মিত শিশুর ত্বকের পরিচর্যা করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শিশুকে নিয়মিত গোসল করানো দরকার। গোসলের পর অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। চর্মরোগ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মলম ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে।
শীতকালে শিশুরা অনেক সময় ঘন ঘন প্রস্রাব করতে পারে। অনেক মা-বাবাই এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। বারবার কাপড় বদলানো, কাঁথা বা চাদর পাল্টানো তাঁদের জন্য একটা বাড়তি ঝামেলা মনে হয়। অনেকে এও মনে করেন, শিশুর ডায়াবেটিস হয়েছে। ছুটে আসেন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে। আসলে এটা তেমন কিছুই নয়। গরমের দিনে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায়; ফলে প্রস্রাব হয় কম। শীতকালে ঘাম কম হওয়ায় প্রস্রাব বেশি হয়ে থাকে। তবু প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা করলে তার রিপোর্ট স্বাভাবিক পাওয়া যায়। মা-বাবা চিন্তামুক্ত হতে পারেন। তাই ছোট থেকে শুরু করে বড় ধরনের শীতকালীন কোনো রোগ হওয়ার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার শিশুকে নিয়মিত হেলথ চেকআপ করান এবং প্রয়োজনীয় টিকাগুলো নিয়মিত দিন। নিউমোনিয়া ও ম্যানিনজাইটিসের টিকা দিতে ভুলবেন না।
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো, ২১ নভেম্বর ২০০৭
লেখকঃ ডা· মো· মুজিবুর রহমান মামুন
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট