Header Ads

Prostate - প্রোস্টেট

প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের প্রোস্টেট দেখতে বড় আখরোটের মতো। ওজন প্রায় ২০ গ্রাম। যদি ওটাকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে নিয়ে দেখা হয়, তাহলে দেখা যাবে ওটা একটা মাংসপেশি, গ্রন্থি ও কানেকটিভ টিস্যুর স্তূপ। প্রোস্টেটের বাইরের আবরণটি মূলত পুরু মাংসপেশি দিয়ে আবৃত­ ওটাকে বলে প্রোস্টেটিক ক্যাপসুল। এ ধরনের নামকরণের কারণ­ প্রোস্টেটকে চার পাশ থেকে ক্যাপসুলের মতো ঘিরে রাখে ওটা। যদিও প্রোস্টেটে সে রকম পৃথকীকরণ চিহ্ন নেই, তবু চিকিৎসকরা প্রোস্টেটকে বর্ণনা করার জন্য কয়েকটি লোব বা অঞ্চলে ভাগ করেছেন। এর কেন্দ্রীয় বা মধ্যাঞ্চলে বেষ্টিত থাকে মূত্রনালী। সাধারণত পাঁচটি লোবে বিভক্ত করা হয়েছে প্রোস্টেটকে। সামনে, পেছনে, মাঝখানে ও দুই পাশে দু’টি। চিকিৎসক যখন প্রোস্টেটের রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা করে থাকেন, তখন বস্তুত এই লোব বা অঞ্চলগুলোই দেখে থাকেন।

রসুন প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে
রসুন, পেঁয়াজ এবং এজাতীয় সবজি প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। জার্নাল অব দ্য ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক সংখ্যায় এই তথ্য ছাপা হয়েছে। চীনে প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত ২৩৮ এবং সুস্থ ৪৭১ জন পুরুষের ওপর পরিচালিত তুলনামূলক এই গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পুরুষ পেঁয়াজ গোত্রীয় সবজি দৈনিক ১০ গ্রামেরও বেশি খেয়ে থাকেন তাদের প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি, যারা দৈনিক ২.

২ গ্রামের কম খেয়ে থাকেন তাদের তুলনায় প্রায় ৫০ ভাগ কম। তিন কোয়া বসুন অথবা এক টেবিল চামচ পরিমাণ কাঁচা পেঁয়াজ থেকেই এলিয়াম জাতীয় এই সবজির ১০ গ্রাম পাওয়া সম্ভব। তবে রান্না করা রসুন কিংবা পেঁয়াজে ক্যান্সার প্রতিরোধক এই গুণাগুণ পুরোপুরি বজায় থাকবে কি না সে বিষয়ে এই গবেষণায় কিছু বলা হয়নি। ইতঃপূর্বে রসুন সম্পর্কিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, রসুন ইনফেকশন প্রতিরোধ, কোলেস্টেরল হ্রাস এবং সম্ভবত ক্যান্সার কোষের বিস্তারের গতি ্লথ করে দেয়। শুধু প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তাই নয়, সাম্প্রতিককালের আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাক কিংবা হার্টের কোনো অপারেশনের পর রসুন হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। তবে রসুনের এই গুণাগুণ পেতে আপাতত গার্লিক ক্যাপসুলের চেয়ে তাজা রসুনকেই বেশি কার্যকর বলে মনে করছেন গবেষকরা।

প্রোস্টেট ব্যথা কমানোর খাদ্য
প্রোস্টেট গ্লান্ড শুধু পুরুষদের আছে। বৃদ্ধ বয়সে প্রোস্টেটের বৃদ্ধি হওয়া খুবই সাধারণ সমস্যা। বেশিরভাগ পুরুষেরই এ সমস্যা দেখা যায়। প্রোস্টেটের বৃদ্ধি ছাড়াও বিভিন্ন কারণে এতে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা কমানোর জন্য তাই ওষুধ থেকে শুরু করে শল্যচিকিৎসারও দ্বারস্থ হতে হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার হারবার ইউসিএলএ মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষকরা এই ব্যথা কমানোর জন্য ‘কুরসেটিন’ নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করেন। গবেষকরা ১৫ জন পুরুষের একটি দলের দুই- তৃতীয়াংশকে দৈনিক দুইবার ৫০০ মিলিগ্রাম করে কুরসেটিন সেবন করান এবং বাকিদের প্লেসিবো দেন। ফলে এক মাস পর দেখা যায়, কুরসেটিন সেবনকারীরা ২৫ ভাগ এবং প্লেসিবো সেবনকারীরা ২০ ভাগ ব্যথা কমাতে সক্ষম হয়েছেন। গবেষকরা অবশ্য এখনো কুরসেটিনের সম্পূরক গ্রহণের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করছেন। তবে প্রাকৃতিক উৎসগুলো হচ্ছে আপেল, পেঁয়াজ, রসুন, ক্রসিফেরি গোত্রের সবজি, কালো চা ও পার্পল রঙের আঙুরের রস।

প্রোস্টেটের ওষুধ সেবনকারীদের চোখের লেন্সে ছানি পড়া অপারেশনে সতর্কতা
প্রোস্টেট শুধু পুরুষদের একটি গ্রন্থি। বৃদ্ধ পুরুষদের একটি পরিচিত রোগ হচ্ছে প্রোস্টেট বড় হয়ে যাওয়া। বৃদ্ধদের আরেকটি পরিচিত রোগ হচ্ছে চোখের লেন্সে ছানি পড়া বা ক্যাটারেক্ট। সাম্প্রতিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে, প্রোস্টেটের ওষুধ সেবনকারীদের ক্যাটারেক্ট সার্জারি করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আগেই সার্জনকে জানাতে হবে রোগী প্রোস্টেটের ওষুধ খাচ্ছেন কি না। সাধারণত প্রোস্টেটের জন্য আলফা ব্লকার গ্রহণ করা হয়। এটি চোখের আইরিশের পেশিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ক্যাটারেক্ট সার্জারি করার সময় আইরিশকে উত্তেজিত করতে হয়, যাতে পিউপিলের আকার বড় হয়­ যা সার্জারির জন্য অত্যাবশ্যকীয়। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত নড়াচড়া আইরিশ ও চোখের অন্যান্য অংশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সেজন্য সার্জনদের উচিত সরু হুক ব্যবহার করা অথবা শক্তিশালী ডাইলেটিং এজেন্ট ব্যবহার করা, যা ইন্ট্রা অপারেটিভ ফ্লপি আইরিশ সিন্ড্রোমকে প্রতিহত করবে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, উপরিউক্ত পরিবর্তিত পদ্ধতিতে অপারেশন করলে তেমন কোনো সমস্যা দেখা দেয় না। ফলে প্রোস্টেট ওষুধ সেবনকারীদের ওষুধ সেবন বন্ধ করার প্রয়োজন নেই।

ডালিম প্রোস্টেট ক্যান্সারের জন্য ভালো
ডালিমের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি প্রোস্টেট ক্যান্সারকে কমাতে পারে। উইসকনসিন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা মানুষের প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোষ ইঁদুরে স্থাপন করে এটিকে ডালিমের রস খাওয়ান। এতে দেখা যায়, এটি টিউমারের বৃদ্ধিকে যথেষ্ট পরিমাণ বাধা দেয় এবং ‘প্রোস্টেট স্পেসিফিক এন্টিজেন’ অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ প্রোস্টেট ক্যান্সার অনেকাংশে বাধার সম্মুখীন হয়েছে।
অপর একটি গবেষণায় দেখা যায়, ডালিম হৃদরোগের জন্যও ভালো। সাউসালিটোয় অবস্থিত ননপ্রফিট প্রিভেনটিভ মেডিসিন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ৪৫ জন হৃদরোগীর কাউকে ২৫০ মিলি ডালিমের রস অথবা প্লেসিবো দৈনিক সেবন করতে দেন। তিন মাস পর দেখা যায়, ডালিমের রস সেবনকারীদের হৃৎপিণ্ডের রক্ত প্রবাহ ১৭ ভাগ বেড়েছে। অপর দিকে প্লেসিবো সেবনকারীদের ১৮ ভাগ রক্তপ্রবাহ কমেছে। গবেষকদের মতে, ডালিমের রস ধমনীতে চর্বি জমা হতে বাধা দেয়।

————————–
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
Powered by Blogger.